বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলীর বিরুদ্ধে বিনা দোষে নূর আলম (৩০) নামে মোটরসাইকেলের একজন মেকানিককে থানায় তুলে নিয়ে নির্যাতন ও ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ দেওয়ার পর থানা থেকে ছাড়া পেয়ে ওসি হাসান আলীর বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে ও ডিআইজির কাছে অভিযোগ করেন নূর আলম। ওসি হাসান আলী ক্ষুব্ধ হয়ে নূর আলম, তাঁর চার ভাই ও চাচাসহ পরিবারের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ভাঙচুর ও লুটপাটসহ একাধিক মামলায় ফাঁসিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
আজ সোমবার বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাসান আলীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন হয়রানির শিকার মোটরসাইকেল মেকানিক নূর আলমের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। নূর আলম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া সদরের পূর্ব সুখানগাড়ী গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে। বর্তমানে নূর আলমসহ তাঁর দুই ভাই হয়রানিমূলক মামলায় কারাগারে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নূর আলমের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, তাঁর স্বামী নূর আলম একজন দরিদ্র মোটর মেকানিক। দুপচাঁচিয়া সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনি ব্যবসা করেন। তাঁর সামান্য আয়ে সংসার চলে। গত ২৯ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে তাঁর স্বামী মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করছিলেন। এ সময় দুপচাঁচিয়া থানার একজন এসআই এসে তাঁকে বিনা দোষে থানায় তুলে নিয়ে যান। এরপর ওসি হাসান আলী কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঠি দিয়ে মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি (ওসি) ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন এবং তা না পেলে হত্যা ও মাদকের মামলায় তাঁকে ফাঁসানোর ভয় দেখান। নিরুপায় হয়ে দেবর ফরিদের মাধ্যমে ওসির হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার পর নূর আলম থানা থেকে ছাড়া পান। পরে ওসি একজন এসআইয়ের মাধ্যমে আবার ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।
এ ঘটনায় নূর আলম গত ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি ওসি হাসান আলী জানতে পেরে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য নানা হুমকি দেন। তাতে কাজ না হওয়ায় ১৭ অক্টোবর দুপচাঁচিয়া সদরের বালু ব্যবসায়ী, একাধিক মামলার আসামি ও ওসির ঘনিষ্ঠজন উপজেলা মিনি ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলামকে দিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের সাজানো মামলা করান ওসি। এতে আসামি করা হয় নূর আলম, তাঁর ভাই নূর ইসলাম ও ফরিদসহ ১০ জনকে।
১৯ অক্টোবরে নূর আলম আগাম জামিন নিতে আদালতে হাজির হলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তিন ভাইকে কারাগারে পাঠান। রাজিয়া সুলতানার অভিযোগ, এতেও ক্ষান্ত না হয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ করায় ওসি জিঘাংসা মেটাতে ১৯ অক্টোবর ছালমা বেগম নামে একজন নারীকে দিয়ে নূর আলম ও তাঁর তিন ভাই নূর ইসলাম, ফরিদ, রুবেল, চাচা বেলাল হোসেন ও নূর আলমের শ্যালক রাব্বীসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আরেকটি মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। বর্তমানে নূর আলম এবং তাঁর ভাইয়েরা দুই মামলায় কারাগারে আছেন। অন্যরা পলাতক। রাজিয়া সুলতানার দাবি, বর্তমানে ওসি এবং তাঁর লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা তাঁদের পরিবারের নারী ও শিশুদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। ভয়ে তাঁর ১০ বছরের মাদ্রাসা পড়ুয়া শিশুর পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আলী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা ঘুষ দাবির অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নূর আলম খারাপ প্রকৃতির মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই ধর্ষণ ও ভাঙচুর মামলা হয়েছে। বাদীর সঙ্গে আমার আগে থেকে কোনো যোগাযোগ নেই।’ নূর আলমের বিরুদ্ধে আগে থেকে কোনো মামলা আছে কি না ওসি তা বলতে পারেননি।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, দুপচাঁচিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে নূর আলম নামের এক ব্যক্তির করা অভিযোগ তদন্তাধীন। তবে কোন কর্মকর্তা তদন্ত করছেন তা বলতে পারেননি তিনি।